কবির গানই কবিগান ,বিষয়টি দুজন কবিকে ঘিরে তৈরী হয়। একজন কবি নির্দিষ্ট বিষয়ের পক্ষ নিয়ে একটি গান করবে। তিনি নিজের যুক্তিতে ঐ বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করবে ,দ্বিতীয় কবি বিরুদ্ধ যুক্তি খাড়া করে প্রথম বিষয়কে হেয় প্রতিপন্ন করবে এবং নিজের বিষয়কে শ্রেষ্ঠ প্রমান করবে। এইরূপ ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কবিগান চলতে থাকে। যারা কবিগান করে তাদের কবিয়াল বলে আবার অনেকে 'ছড়াদার' বলে থাকেন,আবার কবিয়ালদের মধ্যে পাল্লাপাল্লি হয় বলে এঁদের পাল্লাদার বলেও অভিহিত করা হয়। শুধুমাত্র গান দিয়ে কবিগান পরিবেশিত হয় না মাঝে মাঝে ছড়া বা গদ্যের ব্যাবহারও সেখানে থাকে। কবিগান কবিরলড়াই নামেও খ্যাত। এ লড়াই কাব্য ও গীতির লড়াই বলা হয়ে থাকে। কবিয়াল আফাজুদ্দিন একটি ছড়ায় সুন্দরভাবে কবিগানকে ব্যাখ্যা করেছে।
" এ লড়াইয়ে নেই লাঠালাঠি ,
শুধু কথার কাটাকাটি ,
হয় না তাতে চটাচটি,
থাকে শুধু যুক্তির পরিপাঠি।"
কবিগানের রীতিনীতি : কবিগানের মূলগান শুরু হবার আগে দোহারিকা গানের মাধ্যমে দেবস্তূতি করে কবিগানের প্রস্তূতি আনেন। একে বলা হয় 'মহড়া',দোহারকিরা গলা ছেড়ে উচ্চ স্বরে খঞ্জনি বাজিয়ে এবং ঢোলকের জোর শব্দ বাজনার সাথে গান ধরেন। এছাড়া কবিয়ালের ছড়ার মাধ্যমে 'মা' এর বন্দনা করার পর পাঁচালি অর্থাৎ গানের মাধ্যমে মাতৃস্তূতি করতে থাকে। এরপর নানা বিষয়ের মধ্যে কবিয়ালদের তর্ক যুদ্ধ চলে ,কবিগানে কেনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়াকে 'উতোর' বলে এবং প্রশ্ন করাকে 'চাপান' বলে। কবিগানের কোনো সময়সীমা নেই সারাদিন ব্যাপী এই গান চলে পারে। কবিগানের শেষপর্বকে 'বোলকাটাকাটি' বলে আধুনিক কবিয়ালরা এই পর্বকে 'মিলনগীতি ' বলে থাকেন। যে বিষয় নিয়ে কবির লড়াই হয় সে বিষয় ছেড়ে ভিন্ন বিষয় নিয়ে বোলকাটাকাটি হয়। এই পর্বে প্রশ্ন ও উত্তরগুলো তুলনামূলক ছোট ,কবিগানের এই পর্ব খুব জমজমাট।
No comments:
Post a Comment