Saturday, 7 October 2017

ভূমিকা

ব্রিটিশশক্তি যখন ভারতের তথা বাংলার  মাটিত  নিজেদের আঁখের গোছাচ্ছিল এবং দেশীয় রাজাদের একের পর এক পরাজিত করছিলো, এইরূপ প্রেক্ষাপট ঘিরে বাংলায়  কিছু  ইংরেজ তোষামোদকারী নব্য বাবু  শ্রেণী গজিয়ে উঠেছিল। তারা ইংরেজ কৃপাধন্য অর্থের সাহায্যে মদমত্ত ও বিলাসবহুল জীবন কাটাতে লাগলো প্রতি সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত এদের কোঠাবাড়িতে জলসার আসর বসত ,সেখানে খেউড় গান গাওয়া হতো। এই খেউড় থেকেই সেকেলের কবিগানের উৎপত্তি। ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ পর্যন্ত এই গানের বাজারদর ছিল আকাশছোয়া। এইসময় কবিগানের দিক্পালদের জন্ম হয়। ইশ্বরগুপ্তের কলমে 'কবিজীবনী',প্রফুল্ল পালের 'প্রাচীন কবিয়ালদের গান ',নিরঞ্জন চক্রবর্তীর ভাষায় 'ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিয়াল ও বাংলা সাহিত্য ',এছাড়াও দীনেশচন্দ্র সেন ,সুশীলকুমার দে ,সুকুমার সেন ,অসিতকুমার বন্ধোপাধ্যায় প্রমুখ মহারথীগণ বাংলা সাহিত্যে কবিগানের বীজ বপন করেছে। এরপর কবিগানের সাম্রাজ্যে খরা নেমে আসে যার একটি অন্যতম কারণ ছিল উন্নবিংশ শতকের ইংরেজি শিক্ষায় জোয়ার। সেই জোয়ার ভাঁটা ফেলে দেয়  দেশীয় শিপ্লসংস্কৃতিকে। কলিকাতায় গজিয়ে উঠতে থাকে নতুন কায়দায় বিদেশী মডেলের থিয়েটার ফলে কবিগান শহরতলি থেকে সরে পথ খুঁজে নেয় মফস্বলের অলিগলিতে। কুঁড়ির দশকের গোঁড়া থেকে কবিগান আবার মাথা চারা দিতে থাকে। এইসময়ের দেশাত্মবোধক গানগুলো কবিগানের নবজাগরণের পথকে আরো দৃঢ় করে।কিন্তু  সেই ইতিহাস পুরোপুরি জানা যায়নি। ইতস্তত বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কবিয়াল নিয়ে আলোচনা হলেও সামগ্রিক ইতিহাস আমাদের কাছে অজানা। কবিগানের  ঊষালগ্নে \মূলত কলকাতা ,হুগলী জেলাতে  প্রাধান্য ছিল। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফলে হুগলী ,কলকাতা থেকে কবিগান পাততাড়ি গুটিয়ে চলে  আসে বর্ধমান ,বীরভূম ,নদীয়া ,মুর্শিদাবাদ এই জেলাগুলিতে । এই চারটি জেলাকে মধ্যবঙ্গ নামে খ্যাত ছিল। এই জেলাগুলিতে বিংশ শতাব্দীর অনেক কবিগানের  ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে তা বলা বাহুল্য।


                          সেকেলের বাবু কালচারে কবিগানের আসর  ( উৎস গুগল.কম )                         

No comments:

Post a Comment